সুনামগঞ্জ , বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ , ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ভূমিকম্পের শঙ্কায় কাগুজে প্রস্তুতি বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ ৭ দফা দাবি নিখোঁজ সন্তানের সন্ধান চায় পরিবার টালবাহানা না করে দ্রুত নির্বাচনের ঘোষণা দেন : খন্দকার মোশাররফ শান্তিগঞ্জে নদীর তীর কেটে মাটি বিক্রি : আটক ১, দুই লক্ষ টাকা জরিমানা সংলাপ, সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐকমত্য উদ্ধার হয়নি রণভূমির অস্ত্র ঈদের পর ফের উত্তপ্ত হবে রাজনীতির মাঠ স্বস্তির বৃষ্টিতে সতেজ বোরো ধানের চারা, কৃষকের মুখে হাসি পথে যেতে যেতে-পথচারী পুলিশকে পাশ কাটিয়ে দেশ গড়া যাবে না : প্রধান উপদেষ্টা শান্তিগঞ্জে নদী তীরের মাটি কেটে অবাধে বিক্রি খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কুরবাননগরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান হাওরের শক্তি হিজল গাছ জগন্নাথপুরে মাটিবাহী ট্রাক্টরে রাস্তার সর্বনাশ জামালগঞ্জে পরিত্যক্ত জায়গা থেকে পুলিশের পোশাক উদ্ধার মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ ১০দফা দাবিতে মানববন্ধন দেশের ৭৪ উপজেলাকে দুর্গম ঘোষণা ইসির ঈদের পর দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া

ভূমিকম্পের শঙ্কায় কাগুজে প্রস্তুতি

  • আপলোড সময় : ১৯-০৩-২০২৫ ১২:২৮:২৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-০৩-২০২৫ ১২:২৮:২৮ পূর্বাহ্ন
ভূমিকম্পের শঙ্কায় কাগুজে প্রস্তুতি
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ভবনের কয়েকটি তলা নিচে দেবে যায়। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপরে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। ২০০৪ সালের ৯ জুলাই পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারে একটি একতলা ভবন ধসে গেলে ১৯ জন নিহত হয়। ঘটনা দুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার দৃশ্য কেমন হতে পারে। আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এক প্রকল্পের জরিপ থেকে। জরিপে নতুন নতুন অনেক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, রামপুরা, মতিঝিল ও খিলগাঁওয়ের অনেক স্থাপনা গড়ে তোলার সময় যথাযথ নকশা অনুসরণ করা হয়নি বলে ২০১৮ সালের এক সমীক্ষণে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের জৈন্তাপুর চরম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। ওইসব এলাকায় একটি উচ্চমাত্রার ভূমিক¤প ঢাকায় অকল্পনীয় মাত্রার বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরনো ভবন তো দূরের কথা, মাঝারি ভূকম্পন হলে নতুন ভবনগুলো টিকে থাকতে পারবে না। শাঁখারী বাজারে ভবনধসের পর বুয়েটের একটি প্রতিনিধিদল পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে লালবাগ, শাঁখারী বাজার ও তাঁতীবাজার এলাকাকে বিপদাপন্ন ঘোষণা করে। তারা সেখানকার শতাধিক ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে। সুপারিশ বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন একবার উদ্যোগ নিলেও পরে তা থমকে যায়। এর আগে ও পরে বিভিন্ন সময় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একাধিক তালিকা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সরকার। সর্বশেষ বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের অধীনে বেশ কিছু সরকারি ভবনে সমীক্ষা চালায় বিশেষজ্ঞ দল। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধীনে পরিচালিত ওই সমীক্ষায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার কিছু প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালানো হয়। জরিপের লক্ষ্যে ৩ হাজার ২৫২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সংস্থাটি। ২২৯টি ভবনে ত্রুটি খুঁজে পায় বিশেষজ্ঞ দল। ৪২টি ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়। বাকিগুলোর রেট্রোফিটিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। ভবনগুলোর মধ্যে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় রয়েছে। ব্যক্তিগত ও বেসরকারি কোনো ভবন এ জরিপের আওতায় আসেনি। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নগর উন্নয়ন কমিটির সভায় চিহ্নিত ভবনগুলো ১৫ দিনের মধ্যে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এরপর একাধিকবার চিঠি চালাচালি ও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ভবনগুলোর ব্যাপারে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকারি সংস্থাগুলো। আশঙ্কার ব্যাপার হলো, নতুন হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ২২৯টি ভবনের ৮৫টি ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মিত, যা তালিকায় থাকা মোট ভবনের শতকরা ৩৭ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০১৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি ভবন। ২০১০ সালের পরে ৪৯টি এবং ২০১৪ সালের পর ২৯টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন নির্মিত ভবনই যদি ভূমিক¤েপর ঝুঁকিতে থাকে, তাহলে পুরনো জরাজীর্ণ ভবনগুলোর কী অবস্থা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে নির্মিত ভবনগুলোর নি¤œ মান বিশেষজ্ঞদের আরও চিন্তিত করে তুলেছে। তারা বলছেন, পুরনো ভবন ভাঙা কিংবা রেট্রোফিটিং যাই করা হোক না কেন, নতুনগুলোর মান ঠিক রাখতে হবে। নতুন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ধারণার বাইরে চলে যাবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাকিল আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, যেকোনো ঘনবসতির এলাকায় একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকাও উদ্বেগজনক। স্কুল-কলেজের ভবন দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেগুলো যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাহলে দুর্যোগ মোকাবিলায় বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন বলেন, মৃদু ভূমিকম্পে রাজধানীর প্রায় ৭০ শতাংশ কাঠামো ভেঙে যেতে পারে। ঢাকা ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। রাজউককে মনিটরিং এজেন্সি হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে নিরাপদ রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজউকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোয় আমি নিজে পরিদর্শনে যাব। যেগুলোর রেট্রোফিটিং করা যায়, ভবন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তা করব। বাকিগুলোর ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সবার আগে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেব। চলতি মাসে অন্তত চারবার ভূমিক¤প হয়েছে। বছরের শুরুতেও ঘনঘন ভূমিক¤প দেখা গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ৫৪ বার ভূমিক¤প হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি চার মাত্রার ওপরে এবং ৩১টি ৩ থেকে ৪ মাত্রার মধ্যে ছিল। ২০২৩ সালে ৪১ বার, ২০২২ সালে ২১ বার, ২০২১ সালে ৩৫ বার এবং ২০২০ সালে ২৪ বার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিক¤প হয়েছে। এসব ভূমিক¤েপ বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও তা বড় ধরনের ভূমিক¤েপর ইঙ্গিত দেয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশ কয়েকটি সক্রিয় ফল্ট লাইনে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছে; ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে পাঁচটি ভূমিক¤প রিখটার স্কেলে ৭-এর ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প স্তিমিত হয়ে আসে। বিশেষজ্ঞরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন, ভূমিক¤েপর বিপর্যয়ের আগে এমন নীরবতা থাকতে পারে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের আশপাশে যেসব ভূমিক¤প হয়, তার মধ্যে সাধারণত ৮ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিক¤প ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পর ফিরে আসে। আর ৭ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিক¤প ১২৫ থেকে ১৫০ বছরের মধ্যে ফিরে আসে। এ ভূখ-ে ১৭৬২ সালের ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিক¤পটিকে সবচেয়ে বড় ধরা হয়, যা ‘গ্রেট আরাকান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। এতে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর ১৮৯৭ সালে আসামে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিক¤প হয়। ১৯১৮ সালে সিলেটের বালিসিরা উপত্যকায় ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এবং ১৯৩০ সালে আসামের ধুবড়িতে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিক¤প হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ১৮৬৯ সালে সিলেটের কাছার এলাকায় ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ও ১৯২৩ সালে দুর্গাপুরেও বড় ভূমিকম্প হয়। এ কারণে সেখানে বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়, যা সুপ্ত অবস্থায় আছে। ছোট ছোট ভূমিকম্প সেটিকে নাড়া দিতে পারে। সম্প্রতি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়নি মানে এ নয় যে, আর বড় ভূমিকম্প হবে না। তাই প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের সময় হয়ে গেছে। আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিলেটের ডাউকি চ্যুতিরেখায় ৭ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিক¤প হলে ঢাকার কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫টি ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় ভূমিক¤পটি হলে ১৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। আহত হবেন ২৮ হাজার মানুষ। ঢাকার আশপাশে কোথাও ভূমিক¤প হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পটি বিভিন্ন ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাজউক ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্প পরিচালক এবং ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। আমরা তিনটি সিটি করপোরেশনেই (ডিএসসিসি, ডিএনসিসি ও সিসিক) ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করেছি। সেখানে দুর্যোগ মোকাবিলার যন্ত্রপাতি ছাড়াও ফাস্ট এইড রয়েছে। নগর ভবনে মেয়রের নেতৃত্বে একটি অপারেশন সেন্টার থাকবে, যেখান থেকে উদ্ধার কাজের তদারকি করা হবে। ওয়ার্ডপর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্যজনিত অগ্নিনির্বাপণের জন্য অত্যাধুনিক গাড়ি, ক্রেন, অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকাজের সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। -দেশ রূপান্তর

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স